সি ন চি য়াং, গ ণ চী ন
মধু কেনা-বেচা
এফেনদি বাজারে গিয়েছেন মধু বিক্রি করতে। এক ধনী লোক মধুর হাঁড়ি নেড়েচেড়ে দেখে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে, তোমার মধু কি মিষ্টি? খেতে ভাল?
এফেনদি শান্ত কণ্ঠে বলেন, মিষ্টি নয় এমন মধু কি কোথাও আছে? বিশ্বাস না হয় কিনে নিয়ে চেখে দেখুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।
ধনী লোকটি বলে, এক পেয়ালা কি বেচবে?
অবশ্যই। এফেনদি বলেন, এক পেয়ালা কেন? মরজি হলে দু’ পেয়ালাও নিতে পারেন।
ঠিক আছে, এক পেয়ালাই দাও। বলে সে একটি পেয়ালা এগিয়ে দেয় এফেনদি’র দিকে।
হাঁড়ি থেকে মধু ঢেলে এফেনদি পেয়ালা ভরে দেন লোকটার। এরপর কোনও কথা না বলে গটগটিয়ে হাঁটতে শুরু করে সে।
এফেনদি অবশ্য সঙ্গে-সঙ্গে পেছন থেকে টেনে ধরেন তাকে। বলেন, দাম না দিয়ে যাচ্ছেন কোথায়?
দাম দিই নি? তোমাকে আমি ১০ ইউয়ান (টাকা) দিই নি? লোকটি রেগেমেগে চেঁচিয়ে ওঠে।
এফেনদি সঙ্গে-সঙ্গে লোকটির হাত থেকে পেয়ালা কেড়ে নেন। তারপর পেয়ালা থেকে সবটুকু মধু ঢালেন হাঁড়িতে। লোকটি কিছু বলার আগেই তিনি বলে ওঠেন, আপনার পেয়ালা ভরে দিয়েছি─ দিই নি? এখন দয়া করে রাস্তা মাপুন।
আলখাল্লার খাতির
দাওয়াত পেয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলেন এফেনদি। তাঁর পরনে ছিল ছেঁড়া পোশাক। দেখে খুব বিরক্ত হন বন্ধু। ভাবেন, এমন পোশাকে এফেনদিকে দেখলে অন্য মেহমানরা হয়তো মনে করবেন— তিনি গরিব-মিসকিনদের সঙ্গে মেলামেশা করেন। তখন তাঁর মান-সম্মান থাকবে না। তাই দুর্ব্যবহার করে বাড়ি থেকে তিনি বের করে দেন এফেনদিকে।
কিন্তু তাজ্জব ব্যাপার! কিছুক্ষণ পর তিনি দেখেন, হাসতে-হাসতে ঠিকই ফিরে এসেছেন এফেনদি। এবার তাঁর পরনে নতুন এক জমকালো আলখাল্লা।
এবার অবশ্য খুব খুশি হন বন্ধু। খাতির-যত্ন করে তাঁকে বসান ভোজসভায়। এফেনদি কিন্তু ওই খাতিরে গলেন না এতটুকু ৷ খাবার-দাবারের সামনে আলখাল্লাটি মেলে ধরে বলেন, হে আমার সুন্দর আলখাল্লা, তুমি পেট পুরে খাও!
তারপর কিছু খাবার ঢোকান আলখাল্লার ভেতরে।
বন্ধু জিজ্ঞেস করেন, বলি হচ্ছেটা কি?
এফেনদি কাঁধ ঝাঁকিয়ে মৃদু হাসেন। বলেন, কেন? তোমার খাতিরের আলখাল্লাটাকেই তো আদর করে খাওয়াচ্ছি!
মটকুর দাওয়াই
হেকিম হিসেবে যথেষ্ট সুনাম ছিল এফেনদি’র। শহরের সবাই জানতো রোগ সারিয়ে তোলার বিদ্যায় তাঁর বিশেষ পারদর্শিতার খবর।
একদিন থলথলে মোটা এক লোক বহু কষ্টে হেঁটে আসে এফেনদি’র কাছে। বলে, আমাকে বাঁচান! মোটা হতে-হতে আমি এত দশাসই হয়েছি যে আর নড়তে-চড়তে পারি না। কিছু দাওয়াই দিয়ে এই অবস্থা থেকে আমাকে মুক্তি দিন।
মটকু লোকটাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত বেশ ভাল করে দেখেন এফেনদি। তারপর এক টুকরো কাগজে ব্যবস্থাপত্র লিখে বলেন, এতেই হবে।
মটকু দেখে ব্যবস্থাপত্রে লেখা আছে, ১৫ দিনের মধ্যে তুমি মরবে।
এ লেখা পড়ে তার চেহারা হয়ে পড়ে ফ্যাকাশে, পা দু’টো কাঁপতে থাকে ঠক-ঠক করে।
ভয়ে-আতঙ্কে দিশাহারা মটকু কোনও রকমে গড়িয়ে-গড়িয়ে বাড়ি গিয়ে শুয়ে পড়ে ধপাস করে। তারপর অসহ্য যন্ত্রণা, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কাটে তার ১৫টি দিন। খাওয়া-দাওয়ায় কোনও রুচি ছিল না তখন। তরমুজ ছাড়া অন্য কিছু গলা দিয়ে নামাতে পারে নি সে। ফলে থলথলে শরীরটা তার একেবারে হাড় জিরজিরে হয়ে যায়।
১৫ দিনের মাথায় মটকু যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। রেগেমেগে কাঁই হয়ে সে ছোটে এফেনদি’র কাছে। চেঁচিয়ে বলে, ১৫ দিন তো গেল, আমি এখনও দিব্যি বেঁচে আছি─ তোমার সামনে এই দেখ জলজ্যান্ত দাঁড়িয়ে আছি!
এফেনদি হো-হো করে হেসে ওঠেন মটকু’র ভাবভঙ্গি দেখে। ওদিকে ছুটে ক্লান্ত-শ্রান্ত হওয়ায় মটকু কাঁপতে-কাঁপতে পড়ে যায় ফরাসের ওপর।
এফেনদি হাসি থামিয়ে এবার কঠিন স্বরে বলেন, বেকুবের মতো হইচই করো না। যে দাওয়াই লিখে দিয়েছিলাম তার জন্যই তো আজ তুমি আর মোটা নেই। কাজেই কথা না বাড়িয়ে জলদি আমার ফি দিয়ে দাও।
“ ” - Bookworm