কণ্ঠস্বর
কথা বলার মূল সম্পদ হলো কণ্ঠস্বর বা Voice। প্রত্যেক আবৃত্তি শিল্পীকে
প্রথমেই তার কণ্ঠ আবৃত্তি উপযোগী করার জন্য
তৈরি হতে হয়। তাই আমরা কণ্ঠ তৈরির কাজটা শুরু করি।
স্বর সৃষ্টির জন্য যে
তিনটি বিষয় প্রযোজনীয় তা হলো :
(ক) স্বরতন্ত্রীর কম্পন
(voice cord) (খ) এই স্বরতন্ত্রীকে কম্পিত করার জন্য শ্বাস নিঃশ্বাসের শক্তি এবং (গ) ঐ কম্পন
থেকে সৃষ্ট স্বর বহন নিঃশ্বাসের মাধ্যমে পাওয়া। এ ছাড়াও ফুসফুস (Lungs) শ্বাসনালি (Trachea),
স্বরযন্ত্র (Larynx),
গলবিল (Pharynx) প্রভৃতি স্বর সৃষ্টির
সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। স্বর উৎপাদনের এদের ভূমিকা সম্পর্কে জেনে নিই।
চিত্র-১
ফুসফুস (Lungs): আমাদের ফুসফুস অনেকটা
স্পঞ্জের মতো এবং মোচার আকৃতির বেলুনের মতো। এটি অনেকটা সংকোচন ও প্রসারণযোগ্য পাম্পের
মতো। এটি রয়েছে আমাদের বুকের গহ্বরের মধ্যে। নাক আর গলার সঙ্গে সংযুক্ত শ্বাসনালি নেমে
এসে দু ভাগ হয়ে ঢুকে গেছে দুই ফুসফুসের মধ্যে। শ্বাস নিলে ফুসফুস দুটো বেলুনের মতো
ফুলে ওঠে, আর সেই সাথে বুকের পাঁজরও ফুলে ওঠে। আর যেই শ্বাস বেরিয়ে যায়; ফুসফুসও চুপসে
যায় এবং সেই সাথে বুকের পাঁজরও নেমে আসে। ফুসফুসের বাতাস ধরে রাখবার শক্তির ওপর নির্ভর
করে কথা বলার বা স্বর উৎপাদনের জন্য স্বরতন্ত্রীতে কম্পন সৃষ্টি করা। যিনি যত বেশি
বাতাস ধরে রাখতে পারেন, তিনি তত বেশিক্ষণ একদমে বলতে পারবেন।
বক্ষগহ্বর (Thorax) : বুকের কঙ্কালের মাঝখানে
যে ফাঁকটা থাকে তাকেই বলি বক্ষগহ্বর। শিরদাঁড়া, কাঁধের হাড়, বুক ও পাঁজরের হাড়ের ফাঁকা
অংশটুকুই এই এলাকা। এখানে থাকে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও উদর। একটা পাতলা পর্দা বা ডায়াফ্রাম
দিয়ে উদর আর বক্ষগহ্বর ভাগ করা থাকে।
চিত্র-২
১. জিহ্বা মূল
২. ক্রিকয়েড কোমলাস্থি
৩. শ্বসনালি
৪. ফুসফুস
শ্বাসনালি (Trachea):
মুখগহবরের তলা
থেকে নয়খানি কোমলাস্থি (Cartilage)নিয়ে লম্বা গোল নলের মতো নেমে এসেছে এই শ্বাসনালি।
কিছুদূর গিয়ে ভাগ হয়ে ঢুকেছে দুই ফুসফুসে। যে কোমলাস্থি দিয়ে শ্বাসনালি তৈরি, তার সঙ্গে
সংযুক্ত আছে কতকগুলো টিস্যু, যেগুলো খানিকটা পেশির মতো কাজ করে। নাসারন্ধ আর শ্বাসনালির
মাঝে আছে স্বরযন্ত্র বা (Larynx), ছোট্ট যন্ত্র। শ্বাসনালির সঙ্গেই নিঃশ্বাস
ছাড়বার এবং শ্বাস গ্রহণ করবার নালি যুক্ত থাকে। ফুসফুস এবং স্বরযন্ত্র মধ্যবর্তী পথে
যে বায়ুনালি রয়েছে তার দৈর্ঘ্য পুরুষের বেলায় ১২ সে.মি. এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১০ সে.
মি.।
গলবিল (Pharynx): গলবিল দিয়েই নাক থেকে
স্বরযন্ত্র সংযুক্ত রয়েছ। গলবিলের মুখে আলজিহবা রয়েছে। শব্দ সৃষ্টি হলে গলবিলে উত্তেজনা
ছড়িয়ে পড়ে। আলজিহবা আটকে উত্তেজনা কমানো যায় এবং খুলে বাড়ানো যায়। আর এর ফলেই স্বরের
পরিবর্তন ঘটে।
মধ্যচ্ছদা (Diaphragm):
এটি বক্ষগহ্বর
ও উদরের মাঝামাঝি সার্কাসের ট্রাপিজ খেলা দেখাবার নেটের মতো টানানো একরকমের পেশিজাত
পর্দা। এ যেন ফুসফুসকে বেড়ে ওঠা উদরের অন্ত্র-পাকস্থলী ইত্যাদিকে চাপ দিতে দিচ্ছে না।
আবার প্রয়োজনে খানিকটা চেপে বাড়তেও দিচ্ছে। মধ্যচ্ছদীয় স্নায়ুর সহায়তায় এটি শ্বাসনিঃশ্বাস
ক্রিয়ার প্রয়োজনে ওঠানামা করতে পারে। মোটকথা ফুসফুসে আমরা যত খুশি বাতাস ঠেলে ভরে দিতে
পারি না শুধু মধ্যচ্ছদার জন্য। ডায়াফ্রাম একধরনের
পিছল শ্লেষ্মা-ঝিল্লি দ্বারা (mucus membrance) আবৃত।
মধ্যচ্ছদীয় স্নায়ু (Phrenic
Nerve): এটি রবারের মতো কমতে ও বাড়তে পারে, এমন একটি স্নায়ু। এটি গলার কাছে সুষুস্না
কাণ্ড (Spinal Cord) থেকে ডায়াফ্রাম পর্যন্ত গিয়ে যুক্ত হয়েছে।
এটি সংকোচন-সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে ডায়াফ্রামকে ওঠানামা করতে সাহায্য করে। ফুসফুসে
বেশি চাপ দিলে এই স্নায়ু মধ্যচ্ছদাকে টেনে রেখে ফুসফুসের বৃদ্ধিকে সংযত করে। আবার শ্বাস
ছেড়ে দিলে সহজ হয়ে আসে।