ছুঁচো
বাক্সটা ছোট্ট কাঠের। হঠাৎ করে বোঝার উপায় নেই যে এটা একটা ফাঁদ। ইঁদুর বা ছুঁচো ধরার ফাঁদ! একসময় এগুলো বেশ দেখা যেত এখন আর দেখা যায় না। আসলে আজকাল ফাঁদ পেতে কেউ ইঁদুর বা ছুঁচো মারে না। ইঁদুর মারার নানান ওষুধপত্র বের হয়েছে। হয়ত সেগুলোই ব্যবহার করে। মকবুল সাহেবের কেস অবশ্য আলাদা। তার বাসায় ইঁদুর নেই। কিন্তু ছুঁচোর প্রচণ্ড উপদ্রব। সন্ধ্যার পর পরই তাদের কিচ কিচ শব্দে অস্থির হয়ে উঠতে হয়, প্রতিটি ঘরের কোনা ধরে তারা ছুটোছুটি শুরু করে। খুবই বিরক্তিকর সেই কারণে বাজার থেকে এই ফাঁদ কেনা।
ফাঁদের দরজাটার সঙ্গে একটা স্প্রিং লাগানো, টান দিয়ে দরজাটা খুলে একটা ছোট্ট হুকের সঙ্গে লাগাতে হয়। আর খোলা দরজার সামনের ছোট্ট পাটাতনে রাখতে হয় কোন খাদ্য দ্রব্য... ব্যাস ফাঁদ রেডি! ইঁদুর বা ছুঁচো খাবারটা খেতে যেই পাটাতনে ঢুকবে সঙ্গে সঙ্গে ঝপাৎ করে সেটা বন্ধ হয়ে ইঁদুর বা ছুঁচো বন্দি!
প্রথম ছুঁচোটা ধরার পর মকবুল সাহেব খুব উত্তেজনা বোধ করলেন। স্ত্রীকে ডেকে পাঠালেন। ছেলে-মেয়েরা স্কুল কলেজে থাকায় দেখতে পেল না।
- কিন্তু তোমার ছুঁচো তো মরে নি। বাক্সের মধ্যে দিব্যি বেঁচে আছে।
- আরে তাইতো।
- ওটাকে মারবে কিভাব?
আসলেও তাই এটাকেতো মারতে হবে। এই কাজটা কি ভাবে করবেন তিনি। সেটা কিভাবে সম্ভব? আর তখনই বুদ্ধিটা মাথায় এল। ফাঁদটাকে কিছুক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখলেইতো ব্যাটা দম আটকে মরবে। তাই করলেন তিনি বড় বালতিতে কাঠের ফাঁদটাকে মিনিট পাঁচেক ডুবিয়ে ধরে রাখলেন।
ছুঁচোটা বিন্দু বিন্দু কিছু বুদ বুদ বের করে ছটফট করে এক সময় স্থির হয়ে গেল।
এভাবে গোটা সাতেক ছুঁচোকে মারলেন তিনি প্রথম সপ্তাহে। পরের সপ্তাহে আরো গোটা আটেক কিন্তু কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?
- মানে? স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে মকবুল সাহেব নড়ে চড়ে বসেন। বারান্দায় বসে সকালের পেপার পড়ছিলেন তিনি।’তুমি কোন কাজটার কথা বলছ?’
- এই যে, একটা একটা করে ছুঁচোকে মারছ!
- তুমি চাওনা ছুঁচোগুলো মরুক?
- চাই তাই বলে এই ভাবে?
- কোনভাবে?
- মানে এই যে একটা একটা করে পানিতে ডুবিয়ে মারছ। আর যাই বল পানিতে ডুবে মরা খুব কষ্টের ব্যাপার। হোকনা ছোট প্রাণী কিন্তু প্রাণীতো ...
মনে নেই আমি একবার পানিতে ডুবে গিয়েছিলাম ... কি কষ্ট! কি কষ্ট!!
মকবুল সাহেব অবশ্য এভাবে বিষয়টা ভাবেন নি। এ সময় আলোচনায় যোগ দিতে এগিয়ে এল তার রহস্য-রোমাঞ্চ পড়া কন্যা যুথি।
-বাবা ওরা যদি প্রতিশোধ নেয়?
মকবুল সাহেব হো হো করে হেসে ফেলেন।’তার মানে তুই বলছিস মরা ছুঁচোগুলো দল বেঁধে আমাকে হামলা করবে।’
- হ্যাঁ হতেওতো পারে ওদের আত্মা ... ওদের আত্মা নাকি অনেক শক্তিশালী ... একটা গল্পে পড়েছি।
- ঐ সব গল্প পড়েই তোর মাথা গেছে।
- না বাবা আমি সিরিয়াস। কাল রাতে আমি এই নিয়ে ভয়ানক একটা স্বপ্নও দেখেছি।
- ও বাবা স্বপ্ন দেখাও শেষ?
- কি দেখলি স্বপ্নে? মা আগ্রহ দেখান।
“ ” - Bookworm